নিজস্ব প্রতিবেদক।।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড আর শিক্ষক সমাজ সেই মেরুদণ্ড গঠনের কারিগর। কিন্তু সেই শিক্ষক সমাজের কেউ যখন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তখন সমাজ হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই পায় না। এমনই অভিযোগ উঠেছে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী আদর্শ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর বক্সের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক নুর বক্স দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট মাতারবাড়ী আদর্শ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি নানা অনিয়মে জড়ালেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বিষয়গুলো আড়ালে থেকে যায়।
বিদ্যালয়ের ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক টিটু কুমার শীল বাবলু গত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর—টানা তিন মাস বিনা ছুটিতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। বিধি অনুযায়ী অনুপস্থিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, নয় হাজার টাকার একটি চেকের বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক নুর বক্স অক্টোবর মাসের বেতন বিলে স্বাক্ষর করেন।
পরবর্তীতে বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে এলে চেকটি ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে মধ্যস্থতাকারী এক শিক্ষক ক্ষুব্ধ হয়ে চেকটি ছিঁড়ে ফেলেন বলে জানা গেছে।
হাজিরা খাতা পর্যালোচনায় দেখা যায়, টিটু কুমার শীল বাবলু অক্টোবর মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক জানান, বাবলু নিজেই তাদের কাছে প্রধান শিক্ষককে চেক দেওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। এমনকি বাবলুর চাচাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে টিটু কুমার শীল বাবলুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে অনুপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে অক্টোবর মাসের হাজিরা প্রসঙ্গে সদুত্তর দিতে না পেরে প্রথমে অস্বীকার করেন এবং পরে অসুস্থতার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
প্রধান শিক্ষক নুর বক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, বাবলু অসুস্থ থাকায় মেডিক্যাল ছুটি দেওয়া হয়েছে এবং ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন অনুযায়ী বেতন প্রদান করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলামের বক্তব্যের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়নি। সভাপতি অসুস্থতার বিষয়টি জানলেও বেতন প্রদানের বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না বলে জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, “বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি জানার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দিতে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে বেতন প্রদানের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”