
এম আব্দুল মান্নান
কুতুবজোমের তাজিয়াকাটা মাঝি-মাল্লাদের অভিযোগকে আমরা শুধু তাদের আক্ষেপ হিসেবে দেখলে ভুল করব। এটি কেবল একটি গ্রামীণ পাড়ার মানুষের আর্তি নয়, বরং সমগ্র কক্সবাজার তথা দক্ষিণ উপকূলীয় জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের জমে থাকা গণদাবি। কেননা সমুদ্রপথের নিরাপত্তা মানেই উপকূলের মানুষের জীবিকার নিরাপত্তা, মানেই জাতীয় অর্থনীতিরও নিরাপত্তা।
দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা বছরের পর বছর ধরে ডাকাতি, লুটতরাজ আর জলদস্যুতার কবলে জীবন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে পৌরসভার ঘোনাপাড়া এলাকার দাগী ফারুক–নাছির দুই ভাইয়ের নাম সমুদ্রপাড়ের মানুষজনের কাছে আতঙ্কের সমার্থক। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক জলদস্যুতার মামলা রয়েছে। বহু মাঝি-মাল্লার কষ্টার্জিত জাল, বোট, ইঞ্জিন ও মাছ লুট হয়ে গেছে তাদের হাতে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এতো অভিযোগ ও মামলার পরও তারা বছরের পর বছর অদৃশ্য শক্তির ছায়ায় পার পেয়ে গেছে।
প্রশ্ন উঠছে—কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এতদিন তাদের অপরাধের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হলো? উপকূলের জেলে শ্রমিকদের প্রশ্ন, কেন ফারুক–নাছিরের মতো দাগীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাধে সমুদ্রপথে রাজত্ব করেছে?এ কি প্রশাসনিক গাফিলতি, নাকি কোনো অজানা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়?
অবশেষে ফারুক ধরা পড়েছে। এ ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছে উপকূলের মানুষ। কিন্তু জেলেদের দাবি একেবারেই স্পষ্ট—একজনকে ধরলেই সমস্যার সমাধান হবে না। পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সহযোগিদের গ্রেপ্তার না করলে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে জলদস্যুতার এই দৌরাত্ম্য আবার ফিরে আসবে।
প্রতিদিন সমুদ্রে যাওয়া একজন জেলের জীবনের ঝুঁকি কতটা ভয়াবহ, তা আমরা যারা স্থলে বাস করি তারা কল্পনাও করতে পারি না। মাছ ধরতে গিয়ে জলদস্যুদের হাতে লুটপাটের শিকার হওয়া, মারধর খাওয়া, এমনকি অনেক সময় প্রাণ হারানো যেন তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় জেলে সমাজ, বোট মালিক, মাঝি-মাল্লা সকলে এক কণ্ঠে বলছে—”আমরা শান্তি চাই, আমরা নিরাপদ জীবিকা চাই।”
আজ এই দাবিকে আর স্থানীয় অভিযোগ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। উপকূলের মানুষের আর্তি এখন সময়ের কড়া নির্দেশ। সরকার ও প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই চক্রকে নির্মূল করা। উপকূলীয় সমুদ্রপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো এবং নিয়মিত নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
উপকূলীয় অর্থনীতি নির্ভর করে জেলে সমাজের পরিশ্রমের ওপর। তাদের নিরাপত্তা ও জীবিকা রক্ষার প্রশ্নে কোনো অবহেলা করা মানে জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি ডেকে আনা। তাই কুতুবজোম তাজিয়াকাটার জেলেদের আর্তি শুধু তাদের দাবি নয়—এটি উপকূলবাসীর গণদাবি, রাষ্ট্রেরও দায়। আজ ফারুক আটক হলেও, আসল চ্যালেঞ্জ হলো গোটা চক্রকে বিচারের আওতায় এনে উপকূলীয় অঞ্চলে একটি স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা


