
শফিউল আলম বাঙালি নামটি মহেশখালীর রাজনীতির ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের অংশ। তিনি ছিলেন সেই মানুষ, যিনি জীবনের অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় আওয়ামী লীগের জন্য রাজপথে কাটিয়েছেন।
মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্টাতা আব্দুল্লাহ খাঁন, রফিকউল্লাহ সাহেব ও আনোয়ার পাশা চৌধুরীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন তিনি। ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে গণতন্ত্রের সংগ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে তার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
কিন্তু আজ এই প্রবীণ যোদ্ধা আওয়ামী লীগের পতাকার নিচে নেই।এটি নিছক একটি ব্যক্তিগত দলবদল নয়; এটি নীতিহীন ও অবমূল্যায়নভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে এক ধিক্কার।এটি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির আয়না, যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে—ত্যাগীরা কেমন অবহেলার শিকার হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের মতো একটি দল টিকে আছে সেই সব কর্মীদের রক্ত, ঘাম ও চোখের পানিতে, যারা কোনোদিন ব্যক্তিগত লাভ বা পদ চাননি। অথচ আজ তারা সভা-সমাবেশে ঠাঁই পান না, সিদ্ধান্ত গ্রহণে উপেক্ষিত থাকেন, এমনকি সম্মানটুকুও জোটে না। শফিউল আলম বাঙালি নিজেই বলেছেন—“বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে পারিনি।”এই কথার ভেতর লুকিয়ে আছে হতাশা, অবহেলা ও ত্যাগের প্রতি চরম অবজ্ঞার দীর্ঘ ইতিহাস।
বর্তমান রাজনীতিতে কিছু ক্ষমতালোভী ও ভোগবাদী লোক নিজেদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে ব্যস্ত। তারা ভুলে গেছে, যাদের ত্যাগের ওপর ভর করে তারা ক্ষমতার চূড়ায় পৌঁছেছে, সেই মানুষগুলোই আজ বঞ্চিত।
ফলাফল দাঁড়িয়েছে—একজন প্রবীণ কর্মী যখন নিজেকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন, তখন তিনি বাধ্য হয়ে অন্য দলে আশ্রয় নেন। আর তা আমাদের জন্য হওয়া উচিত লজ্জার বিষয়।
শফিউল আলম বাঙালির জামায়াতে যোগদান তাই নিছক একটি ঘটনা নয়—এটি মহেশখালীসহ সারাদেশের আওয়ামী লীগের জন্য এক স্পষ্ট সতর্কবার্তা।
কারণ, যদি ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন অব্যাহত থাকে, তবে আগামী দিনে আরও অনেকেই একই পথ বেছে নেবেন। তখন হারিয়ে যাবে শুধু কিছু কর্মী নয়, হারিয়ে যাবে একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভিত্তি।
আমরা যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের মনে রাখতে হবে—রাজনীতি কেবল ক্ষমতা ভোগের বিষয় নয়। এটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, বিশ্বাস ও ত্যাগের জায়গা।
ত্যাগীদের প্রতি অবহেলা মানে ইতিহাসের প্রতি অবহেলা।
যদি এখনই পরিবর্তন না আসে, তবে আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী সংগঠনও একদিন ভিত্তিহীন হয়ে পড়তে বাধ্য।
শফিউল আলম বাঙালির এই প্রস্থান তাই কেবল একটি দলত্যাগ নয়; এটি আমাদের রাজনীতিকে নতুন করে ভাবার আহ্বান।যদি আমরা সত্যিই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করতে চাই, তবে আজই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—ত্যাগীদের যথাযথ সম্মান দেব, নাকি অবহেলার পথে হাঁটতে হাঁটতে ইতিহাসের কঠিন বিচারের জন্য অপেক্ষা করব।
✍️ এম আব্দুল মান্নান
লেখক ও রাজনীতিবিদ


