
আপনারা আমাকে চিনেন। আমি পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে ব্রিটিশ আমল হয়ে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে খুন হতে শুরু হয়েছি। আমাদের মনুষ্যজাতি এমনভাবে খুন করা শুরু করেছে যে আমরা বাঁচার জন্য বারবার আকুতি জানিয়েছি। আমাদের কেউ যখন খুন হয়েছি, তখন সংঘবদ্ধভাবে মানবজাতিকে জানান দিয়েছি – আমরা খুন হচ্ছি! আমরা কেন খুন হচ্ছি? আমাদের খুনের নেপথ্যে কী কারণ? এসব জানান দেওয়ার জন্য আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত আমরা স্লোগান দিয়েছি। মানববন্ধন করেছি। অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছি। আমাদের বাঁচানোর জন্য বারবার অনুরোধ করেছি! কিন্তু মানবজাতি আমাদের এসব কিছু আমলে নেয়নি! আমরা যখন আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি, তখনো আমরা বারবার জানান দিয়েছি – হে মানুষ জাতি আমাদের বাঁচাও। আমরা এত প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য এমন কোনো কর্মসূচি নেই, যা দিইনি। কিন্তু মনুষ্যজাতির হৃদয় গলাতে পারিনি! মানবজাতি এত ভয়াবহ স্বার্থপর, তা আমরা আগে জানতাম না। আমরা জানতাম সৃষ্টির সেরা জীব – যাকে বলা হয় আশরাফুল মাখলুকাত। আমরা সেই মাখলুকাতের কাছে বারবার প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছি। আমরা বারবার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে জানান দিতে চেয়েছি, আমরা বাঁচতে চাই। তোমরা আমাদের বাঁচাও। কিন্তু মনুষ্য জাতি এত নিষ্ঠুর ও নির্দয় আগে জানতাম না। পরে যখন জানতে পারলাম, আমরা হাল ছেড়ে দিলাম। আমরা আমাদের বংশধরকে পরিষ্কার জানান দিলাম, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও। আমরা এবং আমাদের বংশধরেরা আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লাম। আজ আমাদের বংশ নির্বংশ।
আমাদের মধ্যে যারা পণ্ডিত ছিল, তারা প্রাণপণ নিজেদের বংশ রক্ষার চেষ্টা করেছিল। তারা তাদের জন্য বাঁচতে চেষ্টা করেনি। তারা চেষ্টা করেছে মনুষ্য প্রজাতিকে বাঁচানোর জন্য। তারা মৃত্যুর আগে গবেষণা করে গেছে, এ দেশের মানুষ কত নিষ্ঠুর। তারা তাদের বংশধরকে ধ্বংস করার সকল অপকৌশল প্রয়োগ করছে। এ দেশের মানুষ বড় স্বার্থপর। তারা স্বার্থ ছাড়া কিছুই দেখে না। স্বার্থের জন্য নিজস্ব লোক ছাড়া অন্য সবাইকে খুন করতেও তাদের বাধবে না। তারা মারাত্মক লোভী। তাদের লোভে নিজস্ব প্রজাতিও ধ্বংসের পথে। তারা স্বার্থের জন্য এমন কিছু নেই যে করতে পারে না।
হে মানব প্রজাতি তোমরা তোমাদের স্বার্থের লোভে খাদ্যে বিষ মিশিয়েছ। আর সেই খাদ্যের উচ্ছিষ্ট অংশ খেয়ে আমাদের বংশধর আজ শেষ। তোমরাও বিভিন্ন রকম রোগে-শোকে ভুগছ। তোমাদের পূর্বপুরুষরা যেখানে দীর্ঘজীবন বা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে। সেখানে আজ তোমরা কত দিন বাঁচছ। তোমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক রোগ বাসা বাঁধছে। তোমরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছ। অনেকেই অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে চিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে নিঃশেষ হয়ে পরপারে চলে গেছে। কেউ কেউ পরপারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পৃথিবীতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগে যেখানে মানুষের আয়ু বেড়ে যাচ্ছে, সেখানে তোমাদের আয়ু কেন কমে যাচ্ছে? তোমরা লোভী! তোমরা খাদ্যে বিষ মিশাও! তোমরা আমাদের শেষ করে দিয়েছ! এখন তোমরা শেষ হয়ে যাবে! তোমাদের মধ্যে যারা লোভের দৃষ্টিতে পৃথিবী দেখে, তাদের সতর্ক কর! আমাদের বংশধরসহ আমাদের শেষ করে দিয়েছ! আমরা চাই না আমাদের পরিণতি তোমাদের হোক!
এতক্ষণ রমনা পার্কে মৃত্যুর আগে আমি একটি কাক জনৈক দেশপ্রেমিক, মানবতাবাদী, দেশের কল্যাণ ভাবনাকারী নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তির সাথে এই কথাগুলো বলেছি!
◾খন্দকার মো. জসীম উদ্দিন,সাংবাদিক, কলাম লেখক, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও রাষ্ট্রচিন্তক।


